১৩৯৫ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৫ ঈসায়ী সনের একটি বরকতময় প্রহরে ইলমে দ্বীন বিস্তারের চেতনায় উজ্জীবিত কিছু আলোকিত মানুষের রূহানী পরিবেশে প্রথম বুনিয়াদ ঢালা হয় শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়ার। বিখ্যাত আলিমেদ্বীন হযরত মাওলানা আব্দুর রহীম শায়খে চড়িপাড়ী রহ.-এর দিকনির্দেশনায়, সর্বজনমান্য ব্যক্তিত্ব শায়খ মুঈনুদ্দীন রহ. এর উদ্যোগে এবং এলাকাবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই দ্বীনী দরসগাহ। প্রথমে ‘শাহবাগ দারুল হিফজ মাদরাসা’ নামকরণ করা হলেও পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় ‘শাহবাগ দারুল হিফজ আলিয়া মাদরাসা’। তাহফিযুল কুরআন বিভাগ দিয়ে শুরু হওয়া এ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন মুহতামিম নিযুক্ত হন শায়খ মুঈনুদ্দীন রহ.। আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করে মাদরাসাটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হন। তাঁর ইন্তেকালের পর ১৯৯৬ সালে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ ওলীকুল শিরোমণি, খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আব্দুল গফ্ফার শায়খে মামরখানী রহ.কে এহতেমামের দায়িত্বভার গ্রহণের অনুরোধ জানালে তিনি এ গুরুদায়িত্বটি গ্রহণ করেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি মুহতামিম হিসেবে যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়ে মাদরাসাটিকে একটি আলোকিত প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলেন। অন্যদিকে অত্র অঞ্চলে রমযানিয়া ক্বেরাত প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৮৫ সালে এলাকাবাসীর পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় শাহবাগের কৃতীসন্তান, বরেণ্য আলিম শায়খ মাওলানা ক্বারী আব্দুল হাফিজ দামাত বারাকাতুহুম-এর নিরলস প্রচেষ্টা ও নিঃস্বার্থ মুজাহাদার মাধ্যমে মাদানিয়া কুরআন শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ‘রমযানিয়া ক্বেরাত বিভাগ’ চালু করা হয়। যার নাম ছিল ‘শাহবাগ রমযানিয়া ক্বেরাত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। তিনি এর পরিচালনার কাজ সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিতে থাকেন। বস্তুত ক্বেরাত প্রশিক্ষণের এ ধারাটিই মাদরাসার উন্নতির মাইলফলক হিসেবে গড়ে ওঠে। অতি অল্পদিনে কেন্দ্রটি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করলে ছাত্র-শিক্ষকদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০০১ সালে একটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্ঠায় ক্বেরাতের জগতে শাহবাগ কেন্দ্রটি শীর্ষস্থান লাভ করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে শায়খে মামরখানী রহ.-এর ইন্তেকালে ‘শাহবাগ দারুল হিফজ আলিয়া মাদরাসা’র শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই প্রতিষ্ঠানটির সংস্কার ও অগ্রগতির লক্ষ্যে শাহবাগ এলাকার দ্বীন-দরদী মুসলমানের পরামর্শে ২০০৬ ঈসায়ি তারিখে উভয় মাদরাসাকে একত্র করে নতুন আঙিকে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মাদরাসার শূরা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও দেশবাসীর সম্মিলিত অনুরোধে দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদিম শায়খ ক্বারী মাওলানা আব্দুল হাফিজ দামাত বারাকাতুহুম ইহতেমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন যেন জামিয়া নবযৌবন লাভ করল। সেই সঙ্গে ০২.১০.২০০৬ ঈসায়ি তারিখে নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নামকরণ করা হয় ‘শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া ক্বাসিমুল উলূম’, যা বিগত ২০.০৬.২০০৭ ঈসায়ি তারিখে জকিগঞ্জের প্রথম শ্রেণির হাকিম আদালতের মাধ্যমে এফিডেফিট কার্য সম্পাদন করা হয়। নতুন উদ্যমে সম্পূর্ণ সৃজনশীল পদ্ধতিতে জামিয়ার স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো। সার্বিক পরিবর্তন ও শিক্ষাদীক্ষার মানোন্নয়নের কারণে অল্পদিনের মধ্যেই দেশ-বিদেশে জামিয়ার সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। সেই থেকেই আল্লাহর মেহেরবানীতে মাদরাসার উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রবাহ কখনও শ্লোথ হয় নি।
বালক-বালিকা শাখায় তাকমিল ফিল হাদীসের সূচনা:
প্রতিষ্ঠার আটত্রিশ বৎসরে পা রেখে, ২০১১ ঈসায়িতে জামিয়া অবশেষে কিতাব বিভাগের সর্বোচ্চ জামাত তাকমীল ফিল হাদীস-এর শুভসূচনা করল। মাদরাসা-শিক্ষার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে জামিয়া হল গর্বিত, উচ্ছ্বসিত। দাওয়ারে হাদিসের সূচনা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মাহফিলে আগমন করেন শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ.-এর শেষ খলীফা আল্লামা বিলাল বাওয়া দা.বা.-সহ দেশের অনেক বরেণ্য উলামায়ে কেরাম। অন্যদিকে জামিয়া চায় যে, মুসলিম মেয়েরা সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দার মধ্যে থেকে দ্বীনী শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে গড়ে উঠুক এবং জীবন যাপনে প্রয়োজনীয় শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করে শিক্ষিত ও জ্ঞানী হোক। এজন্যে জামিয়া সম্পূর্ণ নতুন কারিকুলামে, উন্নত ও কার্যকরী সিলেবাস প্রণয়নের মাধ্যমে, শরয়ী বিধানের প্রতি লক্ষ রেখে মেয়েদের দ্বীনি শিক্ষা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। নারী শিক্ষার প্রয়োজন বিবেচনা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালে স্বতন্ত্র ভবনে জামিয়া কর্তৃপক্ষ বালিকা শাখার সর্বোচ্চ জামাত তাকমিল ফিল হাদীস পর্যন্ত পৃথক বানাত বিভাগ চালু করে।
শিক্ষা কার্যক্রম:
যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড হল তার শিক্ষাদীক্ষা। শেখা আর শেখানোর মাঝেই এর প্রাণশক্তি নিহিত। এক্ষেত্রে সামান্যতম অবহেলা থাকলে প্রতিষ্ঠান নির্জীব হয়ে পড়তে বাধ্য। আল্লাহর শুকরিয়া, জামিয়া কর্তৃপক্ষ তার শিক্ষা বিভাগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনায় বিশ্বাসী। বর্তমানে ৭০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই হাজার ছাত্রছাত্রী জামিয়ায় লেখাপড়া করছে। আল-হাইয়াতুল উলয়া, আযাদ দ্বীনি এদারা, বেফাকুল মাদারিস, তানযীমুল মাদারিস ও রাবেতাতুল মাদারিস বোর্ডসমূহের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রতি বছর জামিয়ার ছাত্ররা ঈর্ষণীয় ফলাফল লাভে ধন্য হয়। জামিয়ার শিক্ষা কার্যক্রম কয়েকটি বিভাগে বিন্যস্ত। যথা; কিতাব বিভাগ, তাহফিযুল কুরআন বিভাগ, বানাত বিভাগ, ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন ও নূরানী বিভাগ, ক্বেরাত বিভাগ, এতিমখানা বিভাগ, কম্পিউটার বিভাগ ও কারিগরি বিভাগ।
সাধারণ শিক্ষা বিভাগ:
এটি সকল বিভাগের মধ্যে বৃহত্তর বিভাগ । সর্বোচ্চ জামাত তাকমীল ফিল হাদীসসহ উচ্চ ও মাধ্যমিক স্তরের জামাতসমূহ এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ও আরবী ভাষা-সাহিত্যের পাশাপাশি বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি ভাষার কিতাবাদি এর পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারিত। এখানে ধর্মীয় ও জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ সিলেবাস পড়িয়ে ছাত্রদেরকে যোগ্য ও সচেতন আলেম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। তালীমের পাশাপাশি ছাত্রদের তারবিয়াতের প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অঙ্গনে একজন আদর্শ রাহবার হিসেবে জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে পারে।
তাহফীযুল কুরআন বিভাগ:
এ বিভাগটিকে জামিয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলা যায়। সর্বপ্রথম এ বিভাগের মাধ্যমেই জামিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ১৩জন সুদক্ষ হাফেয সাহেবের নিবিড় তত্ত্বাবধানে তিন শতাধিক ছাত্র কুরআনুল কারীমের হিফজ সম্পন্ন করছে। সাথে সাথে প্রাথমিক তাজবীদ ও জরুরি মাসায়েলেরও শিক্ষা নিচ্ছে। আল-কুরআনের বিশুদ্ধ হাফেয তৈরি করা এ বিভাগের মূল লক্ষ্য। যাতে এর দ্বারা সে দুনিয়া-আখিরাতে সম্মানিত ও সমাদৃত হয় এবং আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের যিম্মাদারীও আদায় হয়।
ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন বিভাগ:
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাদীক্ষার জন্যে এ বিভাগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার কচি কচি শিশুদের বুনিয়াদী দ্বীনী শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজির সুচারু পাঠদান এ বিভাগের মূল উদ্দেশ্য। শিশু-শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৪জন শিক্ষকের স্নেহপূর্ণ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে বিভাগটি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিশু-মনস্তত্ত্বের আলোকে শিক্ষা দান করা বিভাগটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ বিভাগে কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস পাঠ, তাজবীদ, জরুরি মাসায়েল প্রভৃতি বিষয় শিক্ষাদানের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের প্রাইমারি সিলেবাসের বই পুস্তকও পড়ানো হয়। সেইসঙ্গে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদেরকে মাদ্রাসার নিজস্ব উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের শারীরিক ব্যায়াম ও মানসিক বিকাশের নিমিত্তে প্রত্যহ বাদ আসর উস্তাদদের তদারকিতে নিরাপদ খেলাধূলা ও শরীরচর্চার সুযোগ প্রদান করা হয়।
রমযানিয়া ক্বিরাআত প্রশিক্ষণ:
জামিয়ার এ শাখাটি দেশ-বিদেশের সুপরিচিত একটি শাখা। সুদীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে এ শাখাটি কুরআনের খেদমত করে আসছে। মুসলমানের ছেলেমেয়েদের তাজবীদভিত্তিক সহীহ কুরআন তেলাওয়াতের প্রশিক্ষণ দান করাই এর প্রধান লক্ষ্য। মাদানিয়া কুরআন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এটি সর্ববৃহৎ ও সর্বজনপরিচিত একটি সেন্টার। প্রতি রমযানে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত ছাত্রের সমাগম ঘটে এখানে। শিশুশ্রেণি থেকে দাওরাতুল কুরআনিল কারীম পর্যন্ত সুযোগ্য কারী সাহেবদের মাধ্যমে অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে এ বিভাগটি পরিচালিত হচ্ছে। মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ এবং শিক্ষকগণের নিরলস মেহনতের কারণে প্রতি বৎসর এখানকার ছাত্ররা বোর্ড পরীক্ষায় সবচে’ ভালো ফলাফল লাভে সক্ষম হয়। মহান আল্লাহ এ শাখাকে কবুল করুন।
কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিভাগ:
বর্তমান আধুনিক যুগ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। তথ্য আদান-প্রদান ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘুরে আসা যায়। তাই অনলাইনে শাহবাগ জামিয়ার উপস্থিতি সার্বক্ষণিক। জ্ঞানচর্চার এ এক আশ্চর্যরকম বিশাল জগৎ। আমরা আমাদের ছাত্রদের আলোকিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন মাথায় রেখে সবাইকেই এ জ্ঞানসমুদ্রে সাঁতার কাটার কৌশল শেখাতে চাই। অপরদিকে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ নানা দিক বিবেচনা করে শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণের জন্য ১০টি কম্পিউটার রয়েছে। এ বিভাগে আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীদের তুলনায় কম্পিউটার পর্যাপ্ত না থাকায় আরও কয়েকটি কম্পিউটারের নেহায়েত প্রয়োজন রয়েছে। দ্বীন-দরদী ভাইদের এ বিষয়ের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এতিমখানা বিভাগ:
শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়ার শিক্ষাধারার সকল স্তরই পূর্ণত অবৈতনিক। তবু শিক্ষার্থী ঝরে পড়া সমস্যা একেবারে নিরোধ হয় নি। বিশেষত এতিম শিশুরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে অগত্যা পড়ালেখার চিন্তা বাদ দিয়ে অনৈতিক শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে। ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ এবং কল্যাণকর জীবনপদ্ধতির সম্ভাবনা থেকে এভাবেই হারিয়ে যায় নতুন প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। এ সামাজিক সঙ্কট উত্তরণের প্রচেষ্টা হিসেবে ২০০৮ সালে শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়ার শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া এতিমখানা। এ দাতব্য প্রকল্পের জন্যে ১২ শতক ভূমি দান করেন মহিদপুর নিবাসী জনাব হাজী আবদুল্লাহ মিয়া এবং পাঁচতলা ভিত্তির ওপর স্থাপিত ভবনের নিচতলার সম্পূর্ণ নির্মাণখরচ বহন করেন শাহবাগের কৃতীসন্তান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জনাব ডা. আবদুল মালিক। বর্তমানে এতে চার শতাধিক এতিম ও দুঃস্থ শিশু বসবাস করছে- যাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি যাবতীয় খরচই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বহন করেন। উল্লেখ্য যে, অত্র এলাকায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত একটি মানসম্মত এতিমখানা হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও পরিদর্শিত হবার পাশাপাশি বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১১/০৭/২০১০ ইং তারিখে নিবন্ধন লাভ করেছে, নিবন্ধন নং ১১১৭/১০। এতিমখানাটির অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ, মানোন্নয়ন ও সুষ্ঠু পরিচালনা অব্যাহত রাখতে শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া দানশীল সুধী সমাজের প্রতি উদার সহযোগিতার আবেদন পেশ করছে।
বালিকা বিভাগ:
নানাদিক বিবেচনা করে শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া সম্পূর্ণ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে একটি পৃথক ভবনে বালিকা শাখা চালু করেছে। শরয়ী বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রেখে, একেবারেই নতুন কারিকুলামে, উন্নত ও কার্যকরী সিলেবাস প্রণয়নের মাধ্যমে মেয়েদের দ্বীনী শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। আটজন শিক্ষিকার পরিপূর্ণ নেগরানিতে প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রী লেখাপড়া করছে। ছাত্রীদের অনেককেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে হয়। এই প্রয়োজনে জামিয়া একটি বাস ক্রয় করেছে। দূরের মেয়েরা ওই বাসটিতে করে মাদরাসায় আসা যাওয়া করে। ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী করতে এবং তাদের লিখনী শক্তির বিকাশ ঘটাতে আল-মিদাদ ছাত্রীসংসদ গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রত্যেক সপ্তাহে ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ছাত্রী সংসদের পক্ষ হতে বিভিন্ন ভাষায় দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়।
আল-মিদাদ ছাত্রসংসদ:
আল-মিদাদ ছাত্রসংসদ ছাত্রদের নিজস্ব একটি সংগঠন। ছাত্রদের মেধা বিকাশ ও বাকশক্তির স্ফূরণ ঘটানোর লক্ষ্যে এটি সাপ্তাহিক বক্তৃতা ও বিতর্কসভার আয়োজন করে থাকে। সিলেবাসভুক্ত পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও ছাত্ররা যেন বহুমুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সে লক্ষ্যে আল-মিদাদ ছাত্রসংসদ বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বলিত বই-পুস্তক সমৃদ্ধ একটি পৃথক পাঠাগারের ব্যবস্থা করে রেখেছে। ছাত্রদেরকে যোগ্য ও দক্ষ কলমসৈনিকরূপে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করা ছাড়াও ত্রৈমাসিক আরবি, বাংলা ও ইংরেজি তিন ভাষায় তিনটি দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সেগুলোতে ছাত্রদের স্বরচিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প ও ছড়া-কবিতা ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। নবীন লিখিয়েদের সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে পাক্ষিক ‘অনুপ্রেরণা’ নামে একটি ছোটকাগজও বের হয়। প্রতিবছর জামিয়ার বার্ষিক মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে জামিয়ার বার্ষিক মুখপত্র আত্-তাকবীর ও এষণা প্রকাশ করে ইতোমধ্যে দেশের বোদ্ধা পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ছাত্রসংসদের অধীনে গঠিত জামিয়ার শিক্ষার্থীদের সাহিত্য সংগঠন আলোকিত লেখক মঞ্চের উদ্যোগে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন সময়ে নানা নামে বিশেষ বুলেটিন যেমন: ‘আল-হাফীয’, শফকত, মর্সিয়া, চিত্তরোদন, আর্তনাদ ও বেদনা ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া ছাত্রদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ছাত্রসংসদের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটার শেখারও সুযোগ রয়েছে।
আল-মুঈন পরিষদ:
শাহবাগ জামিয়ার ফুযালা, হুফফায, কুররা ও আবনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জামিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ককে অটুট রাখতে এবং তাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিকে স্থায়ী করতে বিগত ২৬.০১.২০১৩ ঈসায়িতে জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা শায়খ মুঈনুদ্দীন রহ.-এর নামানুসারে আল-মুঈন পরিষদ গঠিত হয়। তার সাথে সুসংগঠিত হয়ে ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের নানারকম খেদমত আঞ্জাম ও আকাবির-আসলাফের স্মৃতিধন্য দারুল উলূম দেওবন্দের নযরিয়া ও আন্দোলন সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়াও এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ইহা জামিয়ার ফুযালা, কুররা, আবনা ও হুফফাযের একান্ত সংগঠন। এ পর্ষদের অধীনে প্রতি বছর জামিয়ার বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন স্মারক, ম্যাগাজিন ও ক্রোড়পত্র বের হয়ে থাকে। বিগত বছর এই সংগঠনটি ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ফিকহে ইসলামী’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে জামিয়ার ফাযিলদের পঠিত স্বরচিত প্রবন্ধসমূহ নিয়ে ‘আল-হিকমাহ’ নামক একটি স্মারক প্রকাশ করে।
ভাষা শিক্ষা কোর্স:
সময়টা এখন এমন যে, সিলেবাসের বাছাই করা গুটিকতক বইপত্র পড়ে আধুনিক বিশ্বের সামনে ইসলামকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দ্বীনকে বিজয়ী করতে হলে প্রথমে দরকারি সবধরণের জ্ঞানের বলে বলীয়ান হতে হবে। অবশ্য সেজন্যে বিভিন্ন ভাষা বিশেষত ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। এ প্রয়োজন পূরণ করতেই চালু হয়েছে আধুনিক ভাষাশিক্ষা অনুষদ, যেখানে দক্ষ শিক্ষক দ্বারা পাঠক্রমের বই ও সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সুযোগ হিসেবে আরবী, বাংলা ও ইংরেজি এ তিনটি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে।
ফতোয়া বিভাগ:
ইসলাম একটি চিরকালীন জীবনব্যবস্থা। মানুষের ব্যাক্তিক ও সামাজিক জীবনের সকল সমস্যা সমাধানের পূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামে। কিন্তু যেহেতু সমস্যাসমূহ সবসময় সব জায়গায় একই রকম থাকে না, নতুন সময় ও পরিস্থিতিতে নতুন নতুন দাবি ও জটিলতা নিয়ে হাজির হয়, তাই কুরআন-সুন্নাহর দর্শন ও মূলনীতি অনুসারে ইসলামী আইনের উৎসসমূহ থেকে চিন্তা-গবেষণা করে উদ্ভূত সমস্যার যুৎসই ও যুগোপযোগী সমাধান উদ্ভাবনের সুযোগ রয়েছে। এরই নাম ফতোয়া। সচেতন মুসলমান মাত্র তার নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার টান ছাড়াও ধার্মিক চেতনা থেকেই সে বিভিন্ন বিষয়ে ফতোয়াপ্রার্থী হয়। বিশিষ্ট মুফতিয়ান ও ফতোয়া বিভাগের দ্বারস্ত হয়। এর ভিত্তিতে জামিয়া সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফতওয়া বিভাগ নামে একটি বিভাগ উন্মুক্ত রেখেছে। ইহা পূর্ব-সিলেটের এক অন্যতম ফতোয়া বিভাগ হিসেবে পরিচিত। বিভাগটি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে ঘটনাকে বিচার-বিশ্লেষণ করে সুচারুরূপে ফতোয়া দিতে বদ্ধপরিকর। আল্লাহর অনুগ্রহে শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মুসলমানদের ব্যাক্তিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিবিধ জিজ্ঞাসা ও সমস্যার সঠিক সমাধান পেশ করে ইসলাম ও মুসলমানদের এ গুরুত্বপূর্ণ খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। বর্তমানে ছয়জন মুফতির সম্মিলিত ফতোয়া বোর্ডে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে লিখিত ফতোয়া প্রদান করা হয়। আল্লাহ একে আরো উন্নতি দান করুন।
কুতুবখানা বিভাগ:
মানবজীবনে কুতুবখানা তথা লাইব্রেরির গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নত কুতুবখানা ব্যতীত কোনো জাতির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো দুঃসাধ্য। যে জাতির শিক্ষাগারের কুতুবখানা যত সমৃদ্ধ, সে জাতি জ্ঞান ও অভিজ্ঞানের দিক থেকে ততই ঋদ্ধ। শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া তার কুতুবখানাকে একটি সমৃদ্ধ কুতুবখানা রূপে গড়ে তুলতে সর্বদাই তৎপর। কুতুবখানাটিকে হাজার হাজার কিতাব ও বই-পুস্তক সম্বলিত একটি বৃহৎ কুতুবখানা হিসেবে ঢেলে সাজাতে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার কিতাব ক্রয় করা হয়। তথাপি এখনও অনেক কিতাবের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাভাবের কারণে তা ক্রয় করা নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এদিকে জামিয়ার হিতাকাক্সক্ষীদের দৃষ্টি দেওয়া অত্যাবশ্যক।
প্রকাশনা বিভাগ:
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন বাতিলশক্তি আচ্ছন্ন করে রেখেছে। বহুরূপে বাতিল ফিরকাসমূহের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এসব বাতিলের মুখোশ উন্মোচন এবং হক ও হক্কানিয়তের আওয়াজ বুলন্দ করতে প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই। শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়ার একটি শক্তিশালী প্রকাশনা বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগের অধীনে বিভিন্ন প্রকারের পুস্তিকা, ম্যাগাজিন ও বুলেটিন প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি আল-মিদাদ ছাত্রসংসদের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর বার্ষিক মুখপত্র ‘আত্-তাকবীর’ বের হয়। এ যাবৎ ১৩টি ‘আত-তাকবীর’, ৩টি ‘এষণা’ এবং আরো বিভিন্ন নামে পাঁচটি কিতাব এ বিভাগের অধীনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি বছর ত্রৈমাসিক ‘আল-মানার’ নামে আরবি দেয়ালিকা, ‘অধ্যয়ন’ নামে বাংলা দেয়ালিকা ও ‘দ্যা পেইজ অব নলেজ’ নামে ইংরেজি দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়। মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের মৃত্যুতে ছয়টি মৃত্যু স্মারক প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে সমৃদ্ধ লেখা নিয়ে বিশেষ বুলেটিন, ক্রোড়পত্র ও সাময়িকী প্রকাশ করে এ বিভাগ বিজ্ঞ মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কারিগরি বিভাগ:
জামিয়ার বানাত শাখার অধীনে পৃথক কারিগরি বিভাগ খোলা হয়েছে। এ বিভাগের অধীনে বিগত বছর বিশটি সেলাই মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে শতাধিক ছাত্রীকে দক্ষ মহিলা প্রশিক্ষকের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এতে যেকোনো ছাত্রী অংশগ্রহণ করত প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ বিভাগটি তদারকি করার জন্য জামিয়ার কয়েকজন শিক্ষিকা নিয়োজিত রয়েছেন। জামিয়া বিভাগটিকে আরও উন্নত ও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এছাড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ বিভাগের অধীনে জামিয়া ‘ইলেক্ট্রনিক প্রশিক্ষণ বিভাগ’ খোলার কথাও চিন্তা করছে।
আবাসিক ছাত্রাবাস বিভাগ:
শুরুতে ছাত্র কম থাকায় ও পর্যাপ্ত লজিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় আবাসিক ছাত্রাবাসের তেমন প্রয়োজন ছিল না। পরবর্তী সময়ে ছাত্রসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় ও সকলের জায়গীরের ব্যবস্থা না হওয়ায় এলাকাবাসীর পরামর্শক্রমে জামিয়া কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস বিভাগ চালু করে। এ বিভাগ গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের সম্পূর্ণ ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। প্রায় আট শতাধিক মেধাবী ছাত্র রাতদিন ছাত্রাবাসে অবস্থান করে। তাদের রাতদিন তদারকির জন্য একজন প্রধান ও আটজন সহকারী শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
জামিয়ার পরিচালনা বিভাগ ও অন্যান্য পরিষদ: মজলিসে শূরা, মজলিসে আমেলা, মজলিসে আম, ইহতেমাম বিভাগ, তালিমাত বিভাগ, হিসাব বিভাগ, মজলিসে ইলমী, ট্রাস্টিবোর্ড।
জামিয়ার সম্মানিত সভাপতিবৃন্দ:
শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়ার প্রতিষ্ঠালগ্নে হাতেগোনা যে ক’জন মানুষের বিশেষ অবদান ছিল, তাঁদের অন্যতম হলেন জনাব আলহাজ আবদুর রহমান আমীর সাহেব, যিনি কার্যকরী কমিটির প্রথম সভাপতি। ১৯৭৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাধারে ৪৩বছর অত্যন্ত সুচারুরূপে এই গুরুদায়িত্বটি আঞ্জাম দিয়ে যান। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৭ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব ফজলুল হক আবুল মিয়া। মহান আল্লাহ উক্ত সভাপতিদ্বয় সহ মজলিসে শূরা ও মজলিসে আমেলার জীবিত ও মৃত সকল সদস্যকে তাঁদের দ্বীনি খেদমতের উত্তম বিনিময় দান করুন।
জামিয়ার একাডেমিক ভবনের ভূমিদাতাগণের নাম:
জনাব হাজী মুবারক আলী চৌধুরী, (প্রতিষ্ঠাকালীন ভূমি ওয়াকফকারী), জনাব হাজী আবদুল্লাহ মিয়া,
জনাব হাজী আবদুল মতিন চৌধুরী, জনাব হাজী এনামুল হক চৌধুরী, জনাবা আনওয়ারা বেগম চৌধুরী, জনাব হাজী একরামুল হক চৌধুরী, জনাব হাজী নেজাম মিয়া চৌধুরী, জনাব হাজী আবদুল হাদী চৌধুরী এবং মরহুম আলহাজ এনামুল হক চৌধুরী। এছাড়া আরও অনেকেই মাদরাসার জন্যে ভূমিদানসহ অন্যান্যভাবে অবদান রেখেছেন। আল্লাহ সবাইকে নি’মাল বদল দান করুন।
মাল্টিপারপাস ফার্ম প্রকল্প:
এই প্রকল্পের অধীনে শাহবাগ হাওরে প্রায় তিনশত বিঘা জমি ক্রয় ও দানসূত্রে জামিয়ার মালিকানাধীন রয়েছে। এতে পাঁচটি বৃহৎ ফিশারি খনন করা হয়েছে। স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনায় নেগরানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজিও চাষ করা হয়। একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে গরু ও ছাগলের খামার করা হয়েছে।
যেসব বরেণ্য আলেমের পদস্পর্শে ধন্য জামিয়া:
জামিয়ার স্বনামধন্য মুহতামিম শায়খ ক্বারী মাওলানা আব্দুল হাফিজ সাহেবের অক্লান্ত প্রচেষ্টার বদৌলতে জামিয়ায় দেশ-বিদেশের অনেক উলামা-মাশায়েখ তাশরিফ এনেছেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ কয়েকজন হলেন: ফেদায়ে মিল্লাত আল্লামা আসআদ মাদানি রহ, ফেদায়ে মিল্লাত আল্লামা আরশাদ মাদানি রহ., মুফতিয়ে আযম পাকিস্তান মুফতি মুহাম্মদ রফী উসমানী রহ., পীরে কামিল হযরত হাকিম আখতার সাহেবের সাহেবজাদা হযরত হাকিম মাযহার রহ., আসামের আল্লামা তায়্যিবুর রহমান বড় ভুঁইয়া রহ., মসজিদে আকসার প্রধান ইমাম ও খতিব আলি উমর ইয়াকুব আল-আব্বাসি, সৌদি আরবের আবু আনাস আল-জিলানী, বেফাকুল মাদারিস পাকিস্তানের জেনারেল সেক্রেটারি আল্লামা হানিফ জালন্ধরী, দারুল উলূম করাচির নাইবে মুফতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ., খলিফায়ে মাদানী আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী রহ., মাওলানা মুহি উদ্দিন খান রহ., মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ., আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ., আল্লামা তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জী রহ., মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস রহ., শায়খুল হাদিস ইসহাক রহ. এবং আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. প্রমুখ। এছাড়াও প্রতি বছর জামিয়ার মুহতামিম সাহেবের অনুরোধে ও জামিয়ার টানে শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা আল্লামা বিলাল বাওয়া দা.বা., শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুর রহীম লিমবাদা, শায়খুত তাফসীর শায়খ ড. আশরাফ মাকদাম, পীরেকামিল মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা মুকাদ্দাস আলী শায়খে বারোগাত্তা, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস শায়খে লক্ষ্মীপুরী, সদরে এদারা মাওলানা শায়খ যিয়া উদ্দিন প্রমুখের পদার্পণে ধন্য হয় শাহবাগ জামিয়া।
জামিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
ঐতিহ্যবাহী এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ভৌত কাঠামো দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। জামিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যদি আল্লাহ তাওফিক দেন তাহলে ভাবে সব কয়টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে জামিয়া সম্পূর্ণ আশাবাদী। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
এরকম ছোট-বড় আরো অনেক পরিকল্পনার কথা চিন্তা-ফিকির করছেন জামিয়া কর্তৃপক্ষ। আল্লাহ জামিয়ার পরিকল্পনাধীন সকল কার্যক্রমকে বাস্তবে রূপায়নের তাওফিক দান করুন। আমীন।